1. admin@theonlinenewsbangladesh.com : admin :
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৪ অপরাহ্ন
সাইট উন্নয়নের কাজ চলছে

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যা করে এখন তাদেরই সহায়তা চায়

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৯৯ Time View

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রপ্রদায়ের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ একে ‘জাতিগত নির্মূলের অকাট্য উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। নির্ম হত্যাকান্ডের প্রায় সাত বছর পর সেই রোহিঙ্গাদেরই সহায়তা চাইছে সেনাবাহিনী। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসি। সেখান থেকে জানা গেছে, তাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে সা¤প্রতিক সপ্তাহে যুদ্ধরত জান্তার পক্ষে লড়াই করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য সকলের নামও পরিবর্তন করা হয়েছে। মোহাম্মদ (৩১) নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমি ভীত ছিলাম, কিন্তু আমাকে যেতে হয়েছিল।’ তার তিনটি ছোট বাচ্চা রয়েছে৷ তিনি রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ের কাছে বাও দু ফা ক্যাম্পে থাকেন। গত এক দশক ধরে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা আইডিপি ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য হয়েছে। মোহাম্মদ বলেন, ফেব্রæয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শিবির নেতা গভীর রাতে তার কাছে আসেন। ওই নেতা তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে বলে জানায়। মোহাম্মদ মনে করেছেন এই হলো সেনাবাহিনীর আদেশ। না মানলে তারা পরিবারের ক্ষতি করারও হুমকি দিয়েছে। বিবিসি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে যারা নিশ্চিত করেছে যে সেনা কর্মকর্তারা ক্যাম্পের চারপাশে ঘুরছেন এবং তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য রিপোর্ট করার নির্দেশ দিচ্ছেন। মোহাম্মদের মতো পুরুষদের জন্য ভয়ানক পরিহাস হল মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা এখনো নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত। তাদের স¤প্রদায়ের বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মতো বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধের শিকার। ২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যের মিশ্র স¤প্রদায় থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করা হয় এবং তাদের শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়। পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের আগস্টে সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে নৃশংস ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে। এতে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। এখনো প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশেই বাস করছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের আচরণের জন্য মিয়ানমার এখন হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে। স¤প্রতি আরাকান আর্মি নামক একটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে রাখাইনে বিশাল এলাকা হারানোর পর একই সেনাবাহিনী এখন তাদের জোরপূর্বক নিয়োগ করছে। আর তাতে দেশটির সেনাবাহিনী কতটা হতাশাগ্রস্ত তারই ইঙ্গিত মিলছে। রাখাইনে সেনাবাহিনীর কামান ও বিমান হামলায় কয়েক ডজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। জান্তাও বিপুল সংখ্যক সৈন্য হারিয়েছে। তারা নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে, আত্মসমর্পণ করেছে বা বিরোধীদের কাছে দলত্যাগ করেছে। জান্তার জন্য খুম কম লোকই তাদের জীবনের ঝুঁকি নিতে চায়। আর রোহিঙ্গাদের আশঙ্কা যে তাদের আবারও যুদ্ধে কামানের খোরাক হতে টার্গেট করা হচ্ছে। কারণ জান্তা হেরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মোহাম্মদ বলেন, তাকে সিত্তওয়েতে ২৭০তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালের সা¤প্রদায়িক সহিংসতার সময় বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের শহরে বসবাস করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের শেখানো হয়েছিল কীভাবে বুলেট লোড করতে হয় ও গুলি করতে হয়। তারা আমাদের দেখিয়েছে কিভাবে একটি বন্দুককে বিচ্ছিন্ন করা এবং পুনরায় একত্রিত করা যায়।’ বিবিসির দেখা একটি ভিডিওতে রোহিঙ্গাদের আরেকটি দলকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহৃত পুরানো স্ট্যান্ডার্ড অস্ত্র বিএ ৬৩ রাইফেল কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখাতে দেখা যায়। মোহাম্মদকে দুই সপ্তাহের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, তারপর তাকে বাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু মাত্র দুই দিন পর তাকে ফের ডাকা হয় এবং ২৫০ জন সৈন্যের সঙ্গে একটি নৌকায় চড়ে পাঁচ নদীপথে ঘণ্টায় রাথেদাউং পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পাহাড়ের চূড়ায় তিনটি সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণের জন্য আরাকান সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চলছিল। মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি জানতাম না কেন আমি যুদ্ধ করছি। তারা আমাকে রাখাইন গ্রামে গুলি করতে বললে আমি গুলি করব।’ সেখানে তিনি ১১ দিন যুদ্ধ করেন। তাদের সরবরাহের কুঁড়েঘরে একটি শেল পড়ার পর খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। তিনি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আর্টিলারির আঘাতে নিহত হতে দেখেছেন। সে নিজেও দুই পায়ে ছুরির আঘাত পান। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য সিতওয়েতে নেওয়া হয়। সামরিক বাহিনী আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করার কথা অস্বীকার করেছে। জান্তার মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুন বিবিসিকে বলেছেন, তাদের ফ্রন্ট লাইনে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই, তাই আমরা তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষায় সাহায্য করতে বলেছি। কিন্তু বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিতওয়ের কাছে পাঁচটি ভিন্ন আইডিপি ক্যাম্পে থাকা সাতজন রোহিঙ্গার সবাই একই কথা বলেছে। তারা অন্তত ১০০জন রোহিঙ্গার কথা জানে যাদের এই বছর নিয়োগ করা হয়েছে এবং যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। তারা বলেছেন, সৈন্য এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের দল ফেব্রæয়ারিতে ক্যাম্পে এসে ঘোষণা করেছিল অল্পবয়সী পুরুষদের নিয়োগ করা হবে। প্রথমে বলা হয়েছিল, তারা যোগদান করলে খাবার, মজুরি এবং নাগরিকত্ব পাবে। আরাকান সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে আইডিপি শিবিরে খাধ্যের চরম অভাব দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় খাবারের দামও মারাত্মক বেড়ে গেছে। তবে সেনারা যখন নিয়োগকৃত রোহিঙ্গা পুরুষদের নিতে আসে তখন তারা নাগরিকত্বের প্রস্তাবও প্রত্যাহার করে নেয়। যখন শিবিরের বাসিন্দারা জানতে কেন তাদের অ-নাগরিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়? তখন তাদের বলা হয়েছিল, তারা যেখানে থাকতো সেই জায়গাটি রক্ষা করা তাদের কর্তব্য। তারা সেনা নয়, জঙ্গী হবে। নাগরিকত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে বলা হয়, তোমরা ভুল বুঝেছো। শিবিরের নেতারা এখন গরীব, যাদের চাকরি নেই তাদের টার্গেট করছেন। এক্ষেত্রে তারা পরিবার থেকে দূরে থাকাকালীন তাদের পরিবারকে দেখাশোনা করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। অনেকে আবার শিবিরের অন্যদের থেকে সংগ্রহ করা অনুদানের বিনিময়ে তাদেরকে সেনাবাহিনীতে পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। মানবাধিকার গোষ্ঠী ফোর্টফাই রাইটস-এর ম্যাথু স্মিথ বলেছেন, ‘এই নিয়োগ অভিযানটি বেআইনি এবং জোরপূর্বক শ্রমের অনুরূপ। যা ঘটছে তার নৃশংস এবং বিকৃত উপযোগিতা রয়েছে। সামরিক বাহিনী দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক বিপ্লব প্রতিরোধ করার প্রয়াসে রোহিঙ্গা গণহত্যার শিকারদের নিয়োগ করছে। এই শাসনব্যবস্থায় মানুষের জীবনের কোনো গুরুত্ব নেই।’ রোহিঙ্গারা এখন এমন একটি সেনাবাহিনীর জন্য লড়াই করতে বাধ্য হয়েছে যারা মিয়ানমারে তাদের বসবাসের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় না। মোহাম্মদকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি তাদের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন। তার কোন ধারণা নেই যে এর মূল্য কি, তাকে আরও সামরিক চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে কিনা। আরাকান আর্মি যদি সিতওয়ে এবং তার শিবিরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তবে তার বিরাট সমস্যা হতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2017 zahidit.Com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: BDiT