মাহবুবুজ্জামান সেতু,নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীকে বাঁচাতে সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলার নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম। গত বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক বিস্তৃত পোস্টে তিনি নদীটির ইতিহাস, বর্তমান সংকট এবং রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
পোস্টে এসপি তারিকুল ইসলাম লেখেন, ছোট যমুনা নদী শুধু নওগাঁ নয়—উত্তরাঞ্চলের বহু মানুষের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। নদীটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা থেকে উৎপত্তি হয়ে দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলার ভেতর দিয়ে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। একসময় এ নদীপথ ছিল যাতায়াত, কৃষি উৎপাদন পরিবহন এবং ব্যবসাবাণিজ্যের প্রধান নির্ভরতা। স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশেও নদীটির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নদীটি তার স্বাভাবিক রূপ হারাতে বসেছে—উল্লেখ করে এসপি বলেন, নির্বিচারে ময়লা-আবর্জনা ফেলা, শহরাঞ্চলের বর্জ্য প্রবাহ, শিল্পবর্জ্য, পলি জমে নাব্যতা কমে যাওয়া, নদীর বিভিন্ন অংশ দখল করে স্থাপনা নির্মাণসহ নানা কারণে ছোট যমুনা আজ মারাত্মক সংকটে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শুধু পরিবেশ নয়, জীববৈচিত্র্যও বিপন্ন। অনেক জায়গায় নদীটি শুকিয়ে খাল-ডোবায় পরিণত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে জলবায়ু ও কৃষিকাজেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি আরও লিখেন, “নদী একটি দেশের রক্তনালীর মতো—এটি সুস্থ থাকলে দেশের প্রকৃতি, পরিবেশ ও অর্থনীতি সক্রিয় থাকে। আধুনিক প্রযুক্তি কিংবা সড়ক যোগাযোগ যতই উন্নত হোক, নদীর গুরুত্ব কখনোই কমে না।” তাই তিনি প্রশাসন, স্থানীয় জনসাধারণ, সামাজিক সংগঠন, পরিবেশকর্মী এবং তরুণদের এগিয়ে এসে নদী রক্ষায় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
নদী দখলমুক্ত করা, নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, নদী পুনঃখনন এবং নদী তীরের পরিবেশ সংরক্ষণ—এসব বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে ছোট যমুনাকে আবার তার আগের রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার।
শেষে তিনি সকলকে ছোট যমুনা বাঁচাতে সচেতনতা তৈরি, নদীর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “নদী বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে—প্রকৃতি বাঁচলে আমরা সবাই বাঁচব।”