সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ ৬ই ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ঐদিনে অনেক শহীদের রক্তভেজা ইতিহাসে সুনামগঞ্জ একটি অবিস্মরনীয় দিন। স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালে আজকের দিনে সুনামগঞ্জের বিভিন্নস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদেও সাথে সমর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাক বাহিনীর সদস্যরা লায়নের মাধ্যমে মুক্ত হয়েছিল তৎকালীন মহকুমা শহর সুনামগঞ্জ।
এই সুনামগঞ্জকে আজাদ করতে গিয়ে জেলার অনেক মুক্তিকামী ছাত্র,কৃষক জনতা যুদ্ধে নিজেদের জীবন জীবন বাজি রেখে সশস্ত্র সংগ্রাম করে শহীদ হয়ে এই জেলাকে পাক হানাদার মুক্ত করেছিলেন। ছাত্র,কৃষক ও জনতার সশন্ত্র যুদ্ধে বাধ্য হয়েছিল হানাদার বাহিনী সুনামগঞ্জ থেকে পলায়নে।
সুনামগঞ্জকে স্বাধীন করতে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা তালেব উদ্দিনসহ ৩ জন সূর্য-সন্তান। ঐদিন তারা দেহের তাজা রক্ত দিয়ে প্রমান করেছিলেন বাঙ্গালী জাতি বীরের জাতি তারা কখনো হারতে জানেনা হারাতে জানে । ফলে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মাঝে ও শহরের ঘন মেগাচ্ছন্ন আকাশে হানাদারমুক্ত সুনামগঞ্জের আকাশে বাসাসে স্বাধীনতার লাল সবুজের পপতাকা উড়ছে,তখন এই নির্মম হত্যাযঞ্জের সহযোদ্ধাদের বিজয়োল্লাসকে রিণত করেছিল গভীর বিষাদে।
সূত্রে জানা যায়,ডিসেম্বরের প্রথম সস্তাহে জেলার সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ভেঙ্গে যায় পাক হানাদার বাহিনীর সকল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ৫নং সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ মোতালেব সুনামগঞ্জ সীমান্তের যোগিরগাঁও,ক্যাপ্টেন যাদব শহরতলীর আমবাড়ি বাজার এলাকা এবং ক্যাপ্টন রঘুনাথ গৌরারং এলাকা হয়ে তিনটি ভিন্নদিক থেকে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা মিলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একসাথে সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন।
ফলে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর এই সুপরিকল্পিত সাড়াঁশি অভিযানের মুখে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা শহরে টিকে থাকতে পারেনি। জীবন বাচাঁতে তারা শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। এর আগে ২৬ নভেম্বর হানাদার বাহিনীর সদস্যরা চারদিক ঘিরে আক্রমন চালানোর কারণে মুক্তিকামী লোকজন সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা এলাকায় ঘাঁিট ধরে রাখাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তখনকার সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর তীব্র আক্রমনের মুখে পিছু হঠে পাশেই গোধীগাঁও নৈদের খামার ও মীরেরচর এলাকায় এসে অবস্থান শক্ত করেন।
এখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা পান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে আজকের এইদিনে ৬ই ডিসেম্বর চুড়ান্ত বিজয়ের পথ প্রস্তুত করেন। আজকের এই দিনটিকে বিশেষভাবে মর্মান্তিক করে তুলেছিলেন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা তালেব উদ্দিনের আত্মত্যাগ। প্রতিরোধ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তালেব উদ্দিন শক্রুপক্ষের কাছে আটকা পড়েছিলেন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান,যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী সুনামগঞ্জ ছেড়ে পালানোর সময় সদর উপজেলার আহসানমারা এলাকায় পাক বাহিনীর হাতে আটক তালেবসহ ৩জনকে এক রশিঁতে বেঁধে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করার পর তাদের লাশ সুরমা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এই তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকে অমর করে রাখতে সুনামগঞ্জের আহসানমারা সেতু এলাকায় নির্মিত করা হয়েছিল স্মৃতিসৌধ। তাদের এই আত্মত্যাগ সুনামগঞ্জের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শনিবার ভোরে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ডলুরা ৪৮জন বীর মুক্তিযোদ্ধার গণকবর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পুষ্পস্তবক অপর্পণ করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া,পুলিশ সুপার আবু সাঈদ মোহাম্মদ জাকির হোসেন,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপন রঞ্জন ঘোষ,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাকির হোসেন,সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।